এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ::
বিদেশী নাগরিকসহ আরএসও জঙ্গীরা গোপন বৈঠককালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে আটক আরএসও’র সাবেক সামরিক কমান্ডার হাফেজ ছলাহুল ইসলামসহ তিনজন জেলহাজতে থাকলেও বিজিবির দায়েরকৃত মামলার তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে পলাতক আসামিরা দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। ওসব রোহিঙ্গা জঙ্গীদের নাম চার্জশীটে যেন না আসে, এলক্ষ্যে একটি এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরাও সৌদি আরবে অবস্থানকারী ধনাঢ্যশালী রোহিঙ্গাদের পাঠানো অঢেল টাকায় তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরাকান বিদ্রোহী গ্র“পের (আরএসও) প্রথম সারির নেতা মাষ্টার আয়ুব সহ ৮জন পলাতক ও তিনজনকে গোপন বৈঠকস্থল থেকে ধরে ১১আসামির বিরুদ্ধে বিজিবি হাবিলদার মো: বাবুল মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন টেকনাফ থানায়।
টেকনাফ থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুলাই বিকেলে টেকনাফ শামলাপুর গ্রামে মৌলভী ছৈয়দ করিমের বাড়িতে পার্শ্ববতী দেশের (মিয়ানমার) কিছু নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের নেতা-কর্মীর সঙ্গে টেকনাফ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক ও তার সহোদর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজসহ কয়েক ব্যক্তি গোপন বৈঠক করছিল। তারা বাংলাদেশের অখন্ডতা, জননিরাপত্তা ও স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হত্যা, গুরুতর জখম ও অপহরণসহ রাষ্ট্রের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন তথা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য গোপনে ষড়যন্ত্রমূলক ওই বৈঠকে মিলিত হয়। খবর পেয়ে টেকনাফ বিজিবি ও পুলিশ যৌথ অভিযানে নামে। গোপন বৈঠক থেকে আরএসও’র সাবেক সামরিক কমান্ডার খ্যাত হাফেজ ছলাহুল ইসলাম, মৌলভী ছৈযদ করিম ও মো: ইব্রাহিমকে আটক করে যৌথ বাহিনী। এদিকে বিজিবির দায়েরকৃত মামলায় ৮ পলাতক আসামির মধ্যে আরএসও’র চিহ্নিত জঙ্গী নেতাদের পিতার নাম ও ঠিকানা উলেখ না থাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গীরা মামলা থেকে নিজেদের দায়মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মোটা অঙ্কের টাকার মিশন নিয়ে দু’হাতে খরচ করে চলছে বিভিন্ন স্থানে। টেকনাফ থানার ওসি মো: আবদুল মজিদ জানান, মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। অপরাধী যে হোক, রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র মূলক মামলা থেকে কেউ রেহাই পাবে না।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বাংলাদেশের সমন্বয়কারী কুখ্যাত রোহিঙ্গা জঙ্গী কথিত মাষ্টার মো: আয়ুব ১৯৯১সাল থেকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। সিরিজ বোমা থেকে শুরু করে বিএনপি খালেদা জিয়ার সরকার বিরোধী ৯৩দিনের নিষ্ফল আন্দোলনে পেট্রোল বোমা ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে মাষ্টার আয়ুব। তার পরিচালনাধীন লামা-আলী কদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন অরণ্যে (মিয়ানমার অভ্যন্তরে) একাধিক অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে বলে জানা গেছে। ওসব ঘাঁটি দেখভাল করে থাকে তার ভাইজি জামাতা আবু বক্কর (পলাতক)। ৪৫ বছর বয়সের ভয়ঙ্কর এ রোহিঙ্গা জঙ্গীর শশুরবাড়ি চট্টগ্রামের হালিশহরে হলেও অবস্থান করে থাকে ঢাকার গুলশান এলাকায়। দুর্ধান্ত প্রকৃতির রোহিঙ্গা জঙ্গী আয়ুবের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সৌদি আরবে বসবাসকারী আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে। আড়ালে অবডালে থেকে জামায়াত নেতাদের সহযোগিতায় জঙ্গীপনার কাজ চালিয়ে গেলেও কতিপয় অসৎ পুলিশের সঙ্গে সখ্য থাকায় এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা জঙ্গী আয়ুব মাষ্টারের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। সূত্র মতে, বর্তমানে তার পক্ষে বিশ্বস্থ প্রতিনিধি হিসেবে জামায়াতী কানেকশনসহ জঙ্গীপনার যাবতীয় কাজ করে চলছে কক্সবাজার শহরের রোমালিয়ারছড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাসকারী মৌলভী নুর হোসেন।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফ থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে বিজিবির দায়েরকৃত মামলার ৮ পলাতক আসামির মধ্যে আরএসও প্রতিষ্টা কালীন সভাপতি ডা: ইউনুছ দুবাইতে অবস্থান করলেও অপর ৭জন এদেশে ঘাপটি মেরে রয়েছে। এদের কেউ টেকনাফ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প, কেউ ঢাকা ও চট্টগ্রামে আত্মগোপনে রয়েছে। ডা: ইউনুছ হচ্ছে আরএসও’র প্রতিষ্টাতা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মামলায় লড়তে বিদেশী লবিষ্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে আরএসও জঙ্গী ডা: ইউনুছের সহযোগিতা ছিল বলে সূত্র আভাস দিয়েছে। ওসি আবদুল মজিদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিজিবির দায়েরকৃত মামলার তদন্ত মতে প্রচলিত আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি তাদের সহযোগিতা দেয়। তারা কোনভাবে আসামিদের চিহিৃত করে দিচ্ছে না। স্থানীয়দের সহযোগিতা পাওয়া গেলে ওই আরএসও নেতাদের ধরা যেত। সচেতন মহল জানান, এখানে রোহিঙ্গা দরদী একাধিক এনজিও আরএসও জঙ্গীদের যে কোনভাবে ঝামেলা মুক্ত করার কাজ করে যাচ্ছে। কয়েকটি এনজিও ওই রোহিঙ্গাদের জঙ্গী হিসেবে তৈরি করছে। রোহিঙ্গা জঙ্গী নেতা আয়ুব মাষ্টারের নেতৃত্বে তারা নানাভাবে এদের জঙ্গী প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা নেতা মাষ্টার আয়ুব ইতোপূর্বে একটি এনজিও’র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। ঐ এনজিওসহ ৩টি এনজিও’র কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তারা আবার গোপনে কাজ শুরু করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তিতে। ওই এনজিও চার্জশীট থেকে আরএসও নেতাদের নাম বাদ দিতে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমানে। # কক্সবাজার,০৪-১০- ২০১৬
পাঠকের মতামত